সমাধিস্থল ছাড়াও ১৯৬০ ও ‘৭০ এর দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংশোধনী কেন্দ্র, মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে হার্ট আইল্যান্ড ব্যবহৃত হয়।
সমাধিস্থল ছাড়াও ১৯৬০ ও ‘৭০ এর দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংশোধনী কেন্দ্র, মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে হার্ট আইল্যান্ড ব্যবহৃত হয়।
উনিশ শতকের শেষ দিকে এসে নিউ ইয়র্ক সিটি লুনাটিক অ্যাসাইলামের নারী শাখা হিসেবে হার্ট আইল্যান্ডকে ব্যবহার করেছিল, যদিও কোনো মহিলারই সেখান থেকে সুস্থ হওয়ার খবর মেলেনি। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী- ভর্তি হওয়া নারীদের প্রত্যেকের মানসিক অবস্থা ক্রনিক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
সমাধিস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পূর্বে হার্ট আইল্যান্ড বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৬৫৪ সালে চিকিৎসক থমাস পেল সেখানকার অধিবাসীদের কাছ থেকে এই দ্বীপটি কিনে নেন একটি আনুষ্ঠানিক সন্ধিপত্রের মাধ্যমে। গৃহযুদ্ধ চলাকালে ইউনাইটেড স্টেটস কালারড ট্রুপসের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্যও এই দ্বীপটি ব্যবহৃত হয়েছিল।
১৯৮০ ও ‘৯০ এর দিকে এইডসে আক্রান্ত অসংখ্য মৃতদেহ এখানেই সমাধিস্থ হয়। তখনকার সমাজে এই রোগকে কেন্দ্র করে প্রচলিত বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কারের দরুন এখানে এইডসে মৃত্যুবরণকারী মানুষের সঠিক সংখ্যাটি কখনোই হিসেব রাখা হয়নি, তবে ধারণা করা হয় সমগ্র পৃথিবীতে হার্ট আইল্যান্ডই সর্বাধিক সংখ্যক এইডস রোগীর সমাধিস্থল।
শত বছরের পুরোনো এই হার্ট আইল্যান্ডের সমাধিস্থলে প্রথম সমাহিত ব্যক্তির নাম লুইসা ভ্যান স্লাইক। ১৮৬৯ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই তিনি যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। কোনো পরিবার বা ব্যক্তিই পরিচয়ের কোনো দাবী নিয়ে না আসায় তাকে এখানে কবর দেওয়া হয়।
প্রতি বছর প্রায় সহস্রাধিক লাশের ঠিকানা হয়ে উঠে এই হার্ট আইল্যান্ড। অদ্যাবধি প্রায় ১০ লাখেরও বেশি পরিচয়হীন মৃত ব্যক্তির সমাধি রয়েছে সেখানে।
প্রতি সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক শহর পরিচালিত সকল মর্গ থেকে অজ্ঞাতনামা সব মৃতদেহ হার্ট আইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয় শেষকৃত্যের উদ্দেশ্যে। দ্বীপের মাটিতে তারা শায়িত হন নামহীন সমাধিস্তম্ভের পাদদেশে। মৃত্যুর সাথে সাথে এসব ব্যক্তির একসময়কার নাম-পরিচয় সবই হারিয়ে যায়!
হার্ট আইল্যান্ডে প্রতিটি বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পূর্বে শহরের অফিস অভ দ্য চিফ মেডিক্যাল এক্সামিনার ঠিক ৩০ দিন অপেক্ষা করেন। এই সময়ের মাঝে মৃতের কোনো পরিচয় পাওয়া না গেলে অথবা কোনো পরিচিতজন দাবী নিয়ে না এলে তাকে সমাহিত করা হয়।
ব্রংসে অবস্থিত হার্ট আইল্যান্ড নিউ ইয়র্ক কিনে নেয় ১৮৬৮ সালে এবং গণকবরস্থান হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয় ১৮৬৯ সাল থেকে। শুরু থেকে ফি বছর প্রায় ১,০০০ এরও বেশি লাশ দাফন করা হয়েছে এই দ্বীপটিতে এবং এর বিপরীতে প্রায় ৪০টির মতো মৃতদেহের দাবী নিয়ে স্বজনেরা পরবর্তীতে কোনো সময়ে ফিরে আসেন।
নিউ ইয়র্ক শহরের স্বজনহীন, অজ্ঞাতনামা, বেওয়ারিশ যাবতীয় মৃতদেহের শেষ ঠিকানা হিসেবে পরিচিত হার্ট আইল্যান্ড। একাধিক মহামারিতে মারা যাওয়া অসংখ্য মানুষ, যাদের পরিচয় নির্ণয় করা যায়নি, শেষাবধি তারা এখানেই ঘুমিয়ে আছেন আশ্চর্য নীরবতায়।